রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ককে ছাত্রাবাসে ঢুকে হাতুড়ি পেটা করেছে দৃর্বৃত্তরা। হাতুড়ি ছাড়া তাকে লাঠি ও লোহার রড দিয়েও পেটানো হয়েছে।
ঘটনার পর তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। দুপুরে ‘স্টুডেন্টস রাইটস অ্যাসোসিয়েশন’ রাবি প্যারিস রোডে এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
কর্মসূচি থেকে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।
আহত সমন্বয়কের নাম নুরুল ইসলাম শহীদ।
তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) থাকা ১৭ সদস্য বিশিষ্ট সমন্বয়ক কমিটির অন্যতম সদস্য।
এছাড়া আহত নুরুল ইসলাম শহীদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে। চার বছর ধরে তিনি মহানগরীর ষষ্ঠীতলা এলাকার কিউট ছাত্রাবাসে থাকেন। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওই ছাত্রাবাসে তিনি হামলার শিকার হন।
আহত সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম শহীদ জানান, মঙ্গলবার রাতে তিনি ওই ছাত্রাবাসের নিজ কক্ষে বসে ভাত খাচ্ছিলেন। তখন অজ্ঞাত এক ব্যক্তি গিয়ে ছাত্রাবাসের প্রতিটি কক্ষের দরজা ধাক্কা দিয়ে কাউকে খুঁজতে থাকেন। এ সময় খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, বাইরে থেকে এক ব্যক্তি এসে ছাত্রাবাসে লুকিয়েছেন। তাকেই খোঁজা হচ্ছে। এরপর তিনি বের হয়ে নিজেও খুঁজতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে চারতলার রান্নাঘরে শামীম নামে ওই ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। এরপর যারা শামীমকে খুঁজতে এসেছিলেন তাদের কাছে তাকে হস্তান্তর করার জন্য তাদেরকে ডাকছিলেন তিনি। এরইমধ্যে ছাত্রাবাসে ঢুকে পড়েন শামীমের পক্ষের ২০-২৫ জন ব্যক্তি। তারা কোনোকিছু না শুনেই সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম ও ছাত্রাবাসের মালিক রোকন উদ্দীনকে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন।
শহীদ জানান- তাকে হাতুড়ি, লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পেটানো হয়েছে। বহিরাগতরা চলে যাওয়ার পর তাকে রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। কারণ হাতুড়ি ও রডের আঘাতে তার হাত ভেঙে গেছে বলে তিনি শঙ্কায় ছিলেন। তবে হাসপাতালে নেওয়ার পর এক্স-রে করে দেখা গেছে হাত ভাঙেনি। তাই তিনি পরে হাসপাতাল ছেড়ে চলে আসেন। তবে এখনও তিনি অসুস্থ এবং তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রচণ্ড ব্যথা রয়েছে। এই ঘটনায় তিনি সবার সঙ্গে কথা বলে মামলা দায়ের করবেন বলেও জানান।
রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ জানান, প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে ওই এলাকার স্থানীয় হৃদয় ও মোস্তক মিল্টন নামের দুই তরুণের দ্বন্দ্ব আছে। রাতে হৃদয় ওই এলাকায় ধরে আনে মিল্টনকে। সেখানে হৃদয়ের দুলাভাই শামীমও যান। খবর পেয়ে মিল্টনের লোকজন গিয়ে তাদের ধাওয়া করলে শামীম দৌড়ে গিয়ে ওই ছাত্রাবাসে ঢুকে পড়েন। পরে শামীমের লোকজন তাকে উদ্ধারে ছাত্রাবাসে ঢুকে দেখেন, সমন্বয়ক নুরুলের কাছে শামীম ধরা অবস্থায় আছেন। তখন নুরুলই তাকে আটকে রেখেছেন- এমন সন্দেহে কোনো কথা না শুনেই তারা নুরুলকে পেটাতে শুরু করেন। পরে দেখা যায় ভুল বোঝাবুঝি থেকে ঘটনার সূত্রপাত। তবে খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। তারা এরই মধ্যে সমন্বয়ক নুরুলের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। নুরুল চাইলে এ ঘটনায় মামলা দায়ের করতে পারেন। আর তিনি মামলা করলেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম শহীদের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ও দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বুধবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশন রাবি প্যারিস রোডে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্বদানকারী সমন্বয়কদের ওপর সারাদেশেই গুপ্ত হামলা হচ্ছে যা খুবই আশঙ্কার বিষয়। বলা যায়- উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই জুলাই বিপ্লবকে নসাৎ করতে এবং নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসররা এমনভাবে আকস্মিক হামলা চালিয়েছে। সেজন্য মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে বক্তারা এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...