সোনারগাঁ প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁয়ের একসময়কার চিহ্নিত তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী তাইজুল ইসলাম মসজিদের সভাপতি হতে চাওয়ায় এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার কাবিলগঞ্জ এলাকার বাইতুন নুর জামে মসজিদ গিয়ে কমিটি সম্পর্কে জানা যায়, বিগত ৯ মাস আগে মসজিদ কমিটির সভাপতি তাইজুদ্দিন মারা গেলে তার ছেলে ইকবাল হোসেন সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলো। অথচ হঠাৎ করেই সভাপতি হওয়ার খায়েশ উঠে তাইজুল ইসলাম ওরফে তাজুর।
তাইজুল ইসলাম ওরফে তাজু একই এলাকার মৃত জহুর আলীর ছেলে, তার বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক, জুয়া, গরু চুরি, নারী ব্যবসার দালালসহ একাধিক অভিযোগ। রয়েছে বৈষম্য বিরোধী মামলা। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়েছে, এলাকাবাসী কোন মতেই মানতে পারছে না তাজুলের মতো একজন লোক মসজিদ কমিটির সভাপতি হয়।
বাইতুন নুর জামে মসজিদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল জানান, গত কিছুদিন আগে আমি, তাইজুল ও তার বড়ভাই সাজুর হামলার শিকার হয়ে দুদিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি এসেছি। সোনারগাঁ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছি তাজু ও
সাজুদের নামে। তারা আমাকে বিভিন্ন ভাবে সভাপতি পদ ছেড়ে দিতে হত্যা ও গুমের হুমকি দিয়ে আসছে ।
তিনি বলেন, আমাদের জায়গায় মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মানের পর ওয়াকফা করার সময় তৎকালিন মসজিদের জমিদাতা ও কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে দলিলে এই মসজিদের সভাপতির দায়িত্ব আমাদের বংশধর থেকেই নির্বাচিত করতে হবে বলে উল্লেখ্য করা আছে। সে অনুযায়ী আমিসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে গঠিত কমিটি দিয়ে বর্তমানে মসজিদটি পরিচালনা করছি।
ইকবাল হোসেনের উপর হামলার ঘটনায় তার বড়বোন শাহনাজ বেগম বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, কাবিলগঞ্জ এলাকায় তাইজুল ইসলাম তাজু কুমিল্লা জেলায় গরু চুরি করে জেল খাটার পর থেকে গরু চোরা তাজু নামেই পরিচিত। এর আগে আওয়ামী লীগের আমলে ৬ হাজার পিছ ইয়াবা ও ৮ রাউন্ড বিদেশি অস্ত্রের গুলিসহ ডিবি পুলিশ তাকে গুলিস্তান রাজধানী হোটেল থেকে আটক করে মিন্টু রোডে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। তাজু সোনারগাঁ থানার মোস্ট ওয়ান্টেড আসামীদের তালিকাভুক্ত। দীর্ঘদিন যাবত থানায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে ছবি টানানো ছিল। বর্তমানে সে মাদক ব্যবসা আড়াল করতে মসজিদ কমিটির দিকে কুনজর দিচ্ছে। তাই আমার ভাই ইকবালকে মেরে নিজেকে বাঁচাতে প্যারালাইজড হাতকে ভাঙ্গা হাত দেখিয়ে মিথ্যা ও হয়রানি মুলক অভিযোগ দায়ের করেছে। অতিদ্রুত এই নাটকবাজ আওয়ামী লীগকে আইনের আওতায় এনে আমার ভাইয়ের উপর হামলার বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুসল্লীগন জানান, এই মসজিদের জায়গা যারা দান করেছেন তারা সর্বসম্মতিক্রমে যেহেতু ওয়াকফ দলিলে উল্লেখ্য করে গেছেন জমিদাতার পরিবার থেকেই মসজিদের পরবর্তী সভাপতি নির্বাচিত হবে সেখানে তাজু ও সাজুর বাড়াবাড়ি করাটা বেআইনি।
তারা বলেন, তাইজুল ইসলাম একজন আওয়ামী লীগ নেতা। যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। সে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র হত্যা মামলার তালিকাভুক্ত আসামী।
থানার তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ী কিনা এমন প্রশ্ন কৌশলে পাশ কাটিয়ে অভিযুক্ত তাইজুল ইসলাম ওরফে তাজু সাংবাদিকদের বলেন, এই মসজিদের সাবেক সভাপতি মরহুম তাইজুদ্দিন সাহেব কে গালাগালি করে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করা সভাপতি ইকবালকে মারধর করিনি। আমাকে অপবাদ দেয়া হচ্ছে, সে আমার হাত ভেঙ্গে দিয়েছে।
সোনারগাঁ থানার তদন্ত ওসি রাশেদ খান বলেন, মসজিদ কমিটি নিয়ে দু’পক্ষের অভিযোগ পেয়েছি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র হত্যা মামলার আসামী তাজুর বিষয়টিও অবগত আছি। তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...