ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুর জেলা ভাংঙা উপজেলার কাউলিবেড়া ইউনিয়নের খাটরা গ্রামের কবরস্থানের নামে জায়গা দখল, কাগজ পত্র জালজালিয়াতি, ভুক্তভুগিকে ভয় ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা নেট দুনিয়ায় ভাইরাল তা নিয়ে জনমনে আতংকের সৃষ্টি হয়েছে ।
ফরিদপুর, মাদারীপুর, শিবচর সহ সারা বাংলাদেশের অনেকেই ঘটনাটি জানতে বেশ আগ্রহী।
এই বিষয়ে ভুক্তভুগী পরিবারের সদস্য ফয়সাল রাজুর সাথে যোগাযোগ করে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কবরস্থানের নামে জায়গা দখল এবং দখলকৃত জায়গার কাগজ পত্রে অনিয়ম ও জালিয়াতি তিনিই প্রথম বুঝতে পারেন এবং মসজিদ কমিটির সভাপতি আহমেদকে বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত সমাধানের তাগিদ দেওয়া হয়।
ফয়সাল রাজু বলেন, মূল ঘটনা ১৯৯৯ সালের, একটি নিষ্কন্টক জমিকে ভূমিসন্ত্রাসী দিয়ে দখলের উদ্দেশ্য কবরস্থান বানিয়ে দেওয়া হলো মসজিদ কমিটির সহায়তায়। খুব লক্ষ্য করলে দেখবেন গভীর এক সম্মিলিত চক্রান্ত ও পরিকল্পনা এখানে বাস্তবায়ন হয়েছে। কেউ ইউনুস মাতুব্বরকে দিয়ে তাদের ব্যাক্তি স্বার্থ উদ্ধার করিয়েছে। তা না হলে গ্রামের প্রজ্ঞাবান মাতব্বর ইউনুস মিয়া দুইটা বড় ভূল একসাথে করতে পারে না। প্রথমত নাল জমি ১৯৯৯ সালে এস এ সূত্র ধরে দাদন/ক্রয় করছেন। দ্বিতীয়ত অতি চতুর প্রকৃতির কারো পাতা ফাদে তিনি পা দিয়ে উক্ত জমিটি ২০০৩ সালে কবরস্থানের নামে অপর্ণ করা। যা আসলে আইন ও বিধি সম্মত হয়নি। বরং জটিল হয়েছে। আজ ২৫ বছর পর উক্ত বিষয় সামনে চলে আসায় ইউনুস মাতব্বরের সামাজিক অবস্থান কি কেউ একবার অনুধাবন করুন ? গ্রামের শত শত চোখের তীর্যক প্রশ্ন বা লুকানো হাসি! কোন একজন সুচতুর পরিকল্পনাকারীর ফাদে পা দিয়ে তিনি সামাজিকভাবে আজ বিব্রত। একটা বিষয় পরিস্কার জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছিলেন রশিদ ওরফে বাদশা মিয়া, ইউনুস মাতব্বর এখানে দাবার গুটির মতো ব্যবহৃত হয়েছেন মাত্র তা অবস্থা দৃষ্টে মনে হওয়াই অস্বাভাবিক নয়। আরও উদ্বেগ এর বিষয় হলো ঐ চতুর পর্দার আড়ালে থাকা ব্যক্তিটি গ্রামের একজন সম্মানিত, প্রবীণ, প্রজ্ঞবান ব্যক্তিত্বর মধ্যস্ততায় চৌধুরী এম এ হামিদের পরিবারের ২/৩জন ওয়ারিশকে দিয়ে উক্ত জমির অংশ সাফ কাবলা ওয়াকফ করান। যদিও আজ মধ্যস্ততাকারী ঐ সম্মানিত মানুষটি পৃথিবীতে নেই। তার স্বাক্ষীতে সম্পন্ন হওয়া ওয়াকফনামা অসম্পূর্ণ ও ক্রুটিযু্ক্ত, সকল ওয়ারিশগন অনুপস্থিত। ইসলামের বিধান অনুযায়ী ভাই বা ভাইয়ের সন্তান বোন বা ফুফুর সম্পদ যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে তা দান বা বিক্রি বা ভোগ করতে পারেন না। ২০০৩ সালের সম্পন্ন হওয়া উক্ত সাফকবলা ওয়াকফ নামা তাই ত্রুটিযুক্ত। ঐ সাফকবলা ওয়াকফনামা যারা দিয়েছেন তাদের কাছে যথাযথ বৈধ কাগজ থাকলে তা তারা দেখাতে পারেন।
গোজামিলের ঐ ওয়াকফ নামায় ভুক্তভুগী সদস্যের পিতা মরহুম শাহ আলম এর স্বাক্ষর সহ চৌধুরী পরিবারের আরও তিন সদস্যর স্বাক্ষর সম্পর্কে জানতে চাইলে, ফয়সাল রাজু বলেন, স্বাক্ষরটি তিনি করেছিলেন কিন্তু তা স্বেচ্ছায় করেননি বরং তাকে দিয়ে এক প্রকার জোড় ও মানসকি চাপ সৃষ্টি করে স্বাক্ষর করানো হয়েছিল। মরহুম শাহ আলম তার বৈমাত্রেয় চার বোনের অংশ তাদের লিখিত অনাপত্তি ছাড়া অসম্পূর্ণ ওয়াকফনামা সাফকবলা করে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু উক্ত হলফনামায় সনাক্তকারী হিসেবে মালয়শিয়ার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভয়ংকর, বাটপার ওমর আলিও সেদিন উপস্থিত হয়ে সাফকবলায় স্বাক্ষর করেন ও করিয়ে নেন।
গ্রামের সকলেই জানেন, শাহ আলম শান্ত, সরল, প্রকৃতির সহজ জীবন যাপন করা আদর্শবান সাধারণ মানুষ। তার অনেক বিত্ত বৈভব ছিল না, কিন্তু তিনি একজন নীতিবান মানুষ ছিলেন।
ফয়সাল রাজু আরও বলেন, আমার পিতার উপর বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে যাদের অমানুষিক চাপ প্রয়োগে চোখের অশ্রু ঝরছে সেই অশ্রু সন্তান হিসেবে আমরা আমাদের হৃদয়ে মুক্তা দানার মতো সাজিয়ে রেখেছি। ঐ অশ্রুগুলো অমানুষের মতো আমরা তাদের ফিরিয়ে দিতে চাই না। আমার পিতা শাহ আলম চৌধুরীকে দিয়ে জোর পূর্বক করানো ঐ কাজটি সম্পূর্ণ ভূল, ক্রুটিপূর্ণ এবং তা অবশ্যই সংশোধন হতে হবে। পুত্র হিসেবে আমার দায়িত্ব তা সংশোধন করা। এ বিষয়ে কারো আশ্রয় প্রশ্রয়ে থাকা মসজিদ কমিটির কোন ওজর আপত্তি, হুমকি ধামকি, ভয়-ভীতি কাজে আসবে না।
একজন আইন বিশেষজ্ঞের কাছে আমরা ঘটনার বিষয় নিয়ে আলোচনা করে মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, দানের বিষয় হতে হয় আল্লাহর নামে।মসজিদ, মাদ্রাসায় জমিজমা কারো হক বর্তমান রেখে দান হয় না এবং বিষয়টি দানের মধ্যেও পরে না। আর চাপ প্রয়োগ করে দান লিখিয়ে নেওয়া অন্যায় তো বটেই। যদি তা হয়ে থাকে। আর প্রকৃত বিষয়টি একদম হঠকারিতার মতো ১৯৯৯ সালে এস এ অনুযায়ী যে ব্যক্তি নিজেকে ওয়ারিশ দাবি করে নাল জমি বিক্রি করে, সেই ওয়ারিশই আবার মাঠ জরিপে কাগজ পত্র দেখিয়ে জমিটি তার ভাই চৌধুরী এম এ হামিদ এর বলে সম্পূর্ণ লিপিবদ্ধ করান।
সরকারের মাঠ জরিপ তো অনেক বড় একটা বিষয়।কেউ চাইলেই জরিপকারীগন তার ইচ্ছা মতো তার নাম লিপিবদ্ধ করতে পারেন না। ভূমি জরিপে সরকার কতৃক নির্দিষ্ট মানদণ্ড জরিপকারীদের অনুসরণ করতে হয়।
তাছাড়াও আমরা মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাসুদ মিয়ার সাথে কথা বলি। যদিও তিনি উপরের চাপ থাকায় বেশি কথা বলতে রাজি হননি।তবে তার অল্প কথায় কিছু দূর্বলতার আভাস পাওয়া যায়।
ফয়সাল রাজুর কাছে আরও জানতে চাওয়া হয় এই মহা অনিয়ম দস্যুতা ও দখল সম্পর্কে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ? তিনি বলেন প্রাথমিকভাবে আমি আমাদের পরিবারের পক্ষে স্হানীয় প্রশাসনে লিখিতভাবে অবহিত করেছি।দু-চারদিনের মধ্যে মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন কমিশন ও পিবিআইতে ভূমি দখল-মাটি ভরাট- বাউন্ডারি নির্মানের অর্থের উৎস তদন্তে লিখিত অভিযোগ জানানো হবে। তাছাড়াও আইনের শরনাপন্ন হতে আরও কিছু ধাপ ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
এছাড়াও এই ঘটনার সাথে যুক্ত একজন ব্যক্তি প্রবাসে অবস্থানরত তার বিষয়েও বিস্তারিত লিখিত প্রমান সহ যথাযথ দূতাবাস জানানো হবে। তার নাম, ঠিকানা, ছবি আর মোবাইল নাম্বারের মাধ্যমে ঐ দূতাবাস সকল কিছু খুটিয়ে বের করতে পারবে। হয়ত কিছুটা সময় তারা নিবে কিন্তু তদন্ত হবেই।
এছাড়াও একজন আওয়ামী সরকারি কর্মকর্তা যার সরাসরি দিক নির্দেশনায় মাটি ভরাটের কাজ হয়েছে তার বিরুদ্ধেও তদন্ত চাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
ফয়সাল রাজু বলে তার উথাপিত অভিযোগের বিষয়টি শতভাগ সত্য। অসত্য হলে তারা প্রমান সহ প্রশাসনে কথা বলতে পারেন। ১৯৯৯ সালের থেকে হয়ে আসা ভূমি দখলের ঘটনা চাপা পরে আছে প্রায় ২৬ বছর। গ্রামের সকল মানুষ খারাপ না। আমি গ্রামে ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছি, ২৬ বছরের বেশি সময় ধরে এই দখল, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারতা, দূর্নীতি, ন্যায্য হক নষ্ট সহ অনেক অনিয়ম। কিন্তু সমাজ সেবার নামে যারা অন্যায় প্রশ্রয় দেয়, দূর্নীতিতে নিমজ্জিত হয় তাদের মুখোশ সমাজের সামনে অবশ্যই একদিন উন্মোচিত হবে, ইনশাল্লাহ।
ওমর আলি, ফিরোজের ভা সাহআলাম সহ যারাই গ্রামে সৌহার্দ্য, প্রীতি, শ্রদ্ধা নষ্ট করবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার কন্ঠে আওয়াজ তুলবো। আমরা ওমর আলিদের ছত্রছায়ায় সাহাআলমদের গ্রামে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতে দিবো না। আতংক সৃস্টি করতে দিবো না। সাহাআলম গংদের সন্ত্রাসী কায়দায় প্রকাশ্যে ছোরা হাতে ভীতি প্রদর্শনের লক্ষ্যে গ্রামে ঘুরে বেড়াতে দিবো না। তাদের আমরা প্রতিরোধ করবো।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...