বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ১১:১১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বিরল উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সুশীল সমাজের সংলাপ অনুষ্ঠিত  বেনাপোল কাস্টম বিজিবি গোডাউন থেকে লক্ষ টাকার পণ্য চুরি  নারায়ণগঞ্জ দেওভোগ হাকিম মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ইরানের পাশে দাঁড়াল পরমাণু অস্ত্রধারী দেশ পাকিস্তান রূপগঞ্জে বালু নদীতে ডুবে যাওয়া শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার তেঁতুলিয়ায় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক ৫দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ কোর্স এর শুভ উদ্বোধন ঝিনাইদহে ছেলের কোদালের কোপে বাবার মৃত্যু, ছেলে আটক রাণীশংকৈলে বজ্রপাতে এক নারী নিহত রাণীশংকৈল সীমান্তে ঘাস কাটার অপরাধে বিজিবি এক ব্যাক্তিকে আটক করে রূপগঞ্জে গ্যাসের পাঁচ শতাধিক অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন

বেনাপোল কাস্টম বিজিবি গোডাউন থেকে লক্ষ টাকার পণ্য চুরি 

মো. মানিক হোসেন / ১৯ বার পঠিত
প্রকাশিত সময় : বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ১১:১১ পূর্বাহ্ন

যশোর জেলা প্রতিনিধি: দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরের কাস্টমস বিজিবি গোডাউন থেকে লাখ লাখ টাকার পণ্য চুরির হিড়িক পড়েছে। আর এই পণ্য চুরির মহানায়ক কাস্টমস বিজিবি সাইডে দায়িত্বরত সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান খান শামিম ও তার এনজিও কর্মী মহব্বত।

গত ২ (জুন) সোমবার কাস্টমস গোডাউন থেকে চুরি পণ্যের ব্যাগসহ বিজিবি সদস্যের হাতে আটক হয় এনজিও মহব্বতের সহকারী আরেক এনজিও কর্মী মাহবুব। কাস্টমসের ভেতর থেকে ব্যাগভর্তী পণ্য নিয়ে বাহিরে যাবার সময় বিজিবি সদস্যের হাতে ধরা পড়ে। বিজিবি সদস্য তার হাতে থাকা সাদা প্যাকেট চেক করে ইন্ডিয়ান শ্যাম্পু, সাবান, ফেসওয়াশ, মেহেদী পায়।

এসময় বিজিবি সদস্যের জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় বিজিবি গোডাউনের এনজিও কর্মী মহব্বত তাকে ঈদে ব্যবহারের জন্য দিয়েছে।

কাস্টমস ও বন্দর সূত্র থেকে জানা যায়, বেনাপোল সীমান্ত এলাকায় বিজিবি অবৈধ ও চোরাচালান অভিযান পরিচালনা করে কোটি কোটি টাকার পণ্য আটক করে কাস্টমসে জমা করেন কাস্টমস বিজিবি গোডাউনে আর সেই পণ্য বাছাই করে কাস্টমস নিলাম করে থাকে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার পণ্য চুরি করে এই মহব্বত সিন্ডিকেট। কাস্টমস গোডাউন সাইডে কর্মরত এনজিও কর্মী মহব্বত একটি শক্তিশালী পণ্য চুরি ও বিক্রির নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। সেখানে দেদারছে কাস্টমস বিজিবি গোডাউন থেকে পণ্য চুরি করে বিক্রি করে আসছে।

স্থানীয় বিভিন্ন গোপন তথ্য থেকে জানা যায়, বেনাপোল কাস্টমস বিজিবি সাইডে এনজিও মহব্বত দীর্ঘ বছর যাবৎ গোডাউন সাইডে কাজ করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। পুটখালী এলাকায় তার নামে-বেনামে বহু সম্পদের মালিক এই মহব্বত। যেখানে নেই তার কোন বেতন ও বৈধ পরিচয়।

বিজিবি কর্তৃক কোটি কোটি টাকার আটক পণ্য সামগ্রী জমা হয় এই গোডাউনে দামি ঔষধ, প্রসাধনী, নিষিদ্ধ ঔষধ, ভায়াগ্রা, সেক্সের ট্যাবলেট সহ সার্জিক্যাল পণ্য। এসব পণ্যর মধ্যে প্রসাধনী ও খাদ্য দ্রব্যগুলো নিলাম হয় কিন্তু ঔষধ ও নিষিদ্ধ পণ্য গোডাউনেই থেকে যায় নিলামের সময় পণ্য বাহির করার সময় উক্ত গাড়িতে কৌশলে মহব্বত এসব নিষিদ্ধ ঔষধ ও নিষিদ্ধ পণ্য বিক্রি করে দেয়। এর মূল কারন বিজিবি পণ্য সিজার লিষ্ট সহ পণ্য জমা দেওয়ার পর সব দায়িত্ব থাকে কাস্টমসের। আর কাস্টমস কর্মকর্তারা সেই পণ্য কি করলো না করলো কোন খোঁজ ও হিসাব বিজিবি নেয় না। ফলে বিজিবির আটককৃত অবৈধ এসব পণ্য অনায়াশে বাইরে বিক্রি করতে পারে। গত ২০ মে বিজিবি বিভিন্ন প্রকার ঔষধ সহ প্রায় ২ কোটি টাকার পণ্য সামগ্রী আটক করে এবং কাস্টমস গোডাউনে জমা করে।

ঢাকার বাবু বাজারের ঔষধ ব্যবসায়ী স্বজল জানান, ভারত হতে বিভিন্ন ঔষধ ও আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য পারাপারের একটি সিন্ডিকেট আছে পেট্টাপোল ও বেনাপোলে তাদের মাধ্যমে চুক্তি হয়। পরে তারা পণ্যবাহী ট্রাকে পণ্যের সাথে নিয়ে আসে। মাঝে মাঝে দুই একটি চালান ধরা পড়লেও পুনরায় এসব ঔষধ ও আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য মহব্বতের কাছ থেকে কিনে নিতে পারে। কারন বিজিবি আটক পন্য কাস্টমসে জমা দিলে সেই পণ্যর নিলাম হয়না গোডাউনের এক পাশে রেখে দেই। সুযোগ বুঝে আমাদের লোকরা তার কাছ থেকে কিনে নেয়। শুনেছি কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তাদের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে এসব করা হয়ে থাকে। তাছাড়া নিষিদ্ধ পণ্য ও ঔষধ নষ্ট করার নাম করে কাস্টম থেকে বের করে পথের মাঝেই দিয়ে দেওয়া হয়। আর নাম মাত্র নষ্ট কিছু পণ্য ধরিয়ে ভিডিও করে দেখানো হয়। বর্তমান এসব ঔষধ কাস্টমস গোডাউন থেকে মহব্বতের মাধ্যমে আমরা হাতে পেয়েছি। আরও ঔষধ আছে দ্রুত দিবে বলে জানিয়েছে।

উল্লেখ্য গত ১৬ এপ্রিল তারিখে ডেপুটি কমিশনার মির্জা রাফেজা সুলতানার অভ্যান্তরীণ বদলির আদেশে মনিরুজ্জামান খান শামিম ‘আমদানি পরীক্ষণ’ থেকে শুল্কায়ন গ্রুপ-২ ও কাস্টমস বিজিবি সাইড (আটক) ও ব্যাগেজ শুল্কায়ন শাখার দায়িত্ব পান। দায়িত্ব পেয়েই চোর সিন্ডিকেটের সাথে হাত মিলিয়ে দেদারসে পণ্য বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে নিউজ হওয়ার পরেই গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক কাস্টমস বিজিবি গোডাউনে তালা মেরে ১৬ এপ্রিলের পর থেকে যে সকল পণ্য বিজিবি গোডাউনে জমা হয়েছে তা মিলিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়েছে বেনাপোলের সচেতন নাগরিক বাসী।

আটক পন্য চুরির বিষয়ে দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির শার্শা উপজেলা সভাপতি আক্তারুজ্জামান লিটু বলেন, বেনাপোল সীমান্তে দায়িত্বরত বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) অত্যান্ত দক্ষতার সাথে চোরাচালান ও অবৈধ পণ্য আটক করে কাস্টমসে জমা করে। আর এই পণ্য যদি কাস্টমস থেকে চুরি হয়ে যায় খুবই দুঃখ জনক। এর আগেও কাস্টম কর্মকর্তাদের দায়িত্বের অবহেলার কারনে কাস্টমস ভল্ট থেকে স্বর্ন ও ডলার চুরি হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে কাস্টমস গোডাউন থেকে পণ্য চুরির সিন্ডিকেট ছিলো জানতাম। কিন্তু এখনও পণ্য চুরি হচ্ছে প্রমান পাওয়া গেছে। আমি কাস্টমস কমিশনার সহ গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা অভিযান পরিচালনা করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করছি। এছাড়া দুদক সহ প্রশাসনের নির্ভরযোগ্য বাহিনীদ্বারা অভিযান পরিচালনা করে বহিরাগত এনজিও কর্মী জড়িত মহব্বতকে আটক করে পণ্য চুরির সাথে জড়িতদের আইনের আওতার আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

স্থানীয় আমদানি কারক মেহেদী হসান জানান, কাস্টমস বিজিবি গোডাউন সাইডে পণ্য চুরির এটা নতুন কি? এনজিও মহব্বত চোর ও অকশন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বহু বছর ধরে এই কাজ করে আসছে। এমনকি বিজিবি সাইডে অকশন কে পাবে সেটাও ঠিক করে মহব্বত। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ গোডাউন সইডে বহিরাগত হয়ে কি ভাবে কাজ করে বুঝে আসেনা। পণ্য চুরি ও অবৈধ কাজ বন্ধে কাস্টমস গেট ও বন্দরের গেটে বিজিবি বা কোস্টগার্ড বসানো উচিত।

পণ্য চুরির বিষয়ে কাস্টমস বিজিবি সাইডে দায়িত্বরত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান খান শামিমকে মুঠোফোনে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ঈদের জন্য এনজিও মাহবুবকে কিছু আটক পণ্য ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে। শুনলাম সেগুলো বিজিবি আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে গেছে। গোডাউন থেকে পণ্য দেওয়ার কোন এখতিয়ার আছে কি জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। তিনি বলেন বিষয়টি আমি দেখছি।

এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমসে দায়িত্বরত কমিশনার কামরুজ্জামান কাজলকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে না পাওয়ার কারনে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...


এ ক্যাটাগরীর আরো খবর..